কলেজ লাইফে নাজমা ম্যাডাম আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন কারণ তিনি পাতলা শাড়ি পড়তেন। পড়া না পারলে তিনি জঘন্য সব কথা বলতেন আমাদের। তবে আমরা আগ্রহ নিয়েই সেসব শুনতাম। পাতলা শাড়ি পড়া একটি ইন্দ্রানীর মত সুন্দরী মেয়ের মুখে দুই একটি জঘন্য কথা শুনতে খারাপ না।
নাজমা ম্যাডাম একটা লাল টুকটুকে গাড়িতে করে আসতেন। তার গাড়িটা তার মতই সুন্দর ছিল। গাড়ির ড্রাইভারের নাম মাখন। মাখনের দৃষ্টি খারাপ ছিল। ম্যাডামের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতো।
ম্যাডাম মাঝে মাঝে বলতেন, মাখন তোমার সমস্যা কী?
মাখন বলতো, ম্যাডাম চোখটা ক্যান জানি ফড় ফড় করতাছে। চোখটা ড্যামেজ হইছে মনে হয়। গরীবের চোখ – কথায় কথায় ড্যামেজ হইয়া যায়। গরীবরে দেখার কেউ নাই। গরীব হইল ড্যামেজ জিনিস।
ম্যাডাম বলতেন 'বেশী কথা বলবেনা, আমি একটু পরে আবার বের হব। গাড়ি নিয়ে রেডি থাকবে।'
নাজমা ম্যাডাম ইংলিশ পড়াতেন। তিনি ভারি ফ্রেমের চমশা পড়তেন তবে চশমাটার মধ্যে কিছু একটা ছিল, চশমার কারণে চোখ দু'টো রহস্যময় লাগতো। ম্যাডাম সুন্দর পরিপাটি করে কালার ম্যাচিং করে শাড়ি পড়তেন। তার পছন্দের রঙ সম্ভবত গোলাপী ছিল। অনুমানে বললাম। মেয়েদের পছন্দের ধরনগুলো ঘুরে ফিরে এক। ক্লাসের মেয়েরা উনাকে সহ্য করতে পারতো না। মেয়েদের বাজার উনি দখল করে ফেলেছিলেন।
ম্যাডামকে নিয়ে ক্লাসে নানান ধরনের রসালো কথাবার্তা প্রচলিত ছিল। এসব রসালো কথাবার্তার কিছু কিছু ক্লাসের মেয়েরাও বানাতো। মেয়েদের টার্গেট ছিল তাকে একজন খারাপ মহিলা হিসাবে প্রমান করা।
ম্যাডামকে নিয়ে প্রচলিত কিছু কথাবার্তা আবার বেশ অশ্লীল। যেমনঃ উনাকে দেখলে ম্যানেজম্যান্টের টিচার মোতালেব স্যারের নাকি বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে যায়, দারোয়ান হরিপদের শরীরে হুড় হুড় করে কাপুনি দিয়ে জ্বর উঠে ইত্যাদি হাবিজাবি।
ক্লাসের অনেক ছেলে ইংরেজীর নানা রকম মনগড়া সমস্যা খুজে বের করে উনার রুমে যেত সমাধান করার জন্য। উদ্দেশ্য পাতলা শাড়ি পরিহিত ম্যাডামকে একবার দেখে নেয়া।
দীপু একবার গিয়ে বলল, ম্যাডাম, একটা ট্রান্সলেশান পারছিনা। পাখি পাকা পেপে খায় – এর ইংলিশ কি?
ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে বললেন, সেটা পাখিকেই জিজ্ঞেস কর গিয়ে। যে খায় তারই জানার কথা। এইসব ফালতু প্রশ্ন নিয়ে আর কোনদিন যাতে আমার রুমে ঢুকতে না দেখি।
একবার ইংরেজীর টিচার সুব্রত স্যারকে দেখলাম ম্যাডামের রুমে ঢোকার আগে পকেট থেকে ছোট চিরুনী বের করে চুল আচরাচ্ছেন। উদ্দেশ্য স্মার্ট হয়ে ঢুকে স্মার্টনেস দিয়ে ম্যাডামকে কাবু করে ফেলা।
এক ছাত্র ব্যাপারটা দেখে ফেলে স্যারকে বিব্রত করার জন্য গিয়ে বলল, স্যার আসসালামু আলাইকুম।
স্যার তাড়াতাড়ি চিরুনী পকেটে ঢুকিয়ে বললেন, ইয়ে কিছু না।
২০০৭ সালের কথা। কলেজ লাইফের শেষ পরীক্ষা চলছিল সেদিন – মডেল টেষ্ট। আমি পরীক্ষা দিতে গেছি। গিয়ে দেখি কিছুই পারিনা, পারার কথাও না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে ধানমন্ডি লেক, অতি মনোরম দৃশ্য। আমি মনোরম দৃশ্য দেখছি জানালা দিয়ে। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে কপোত কপোতী দেখা যাচ্ছে কিছু। এরা দুজন দুজনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। দুনিয়ার সাথে এদের কোন যোগসূত্র আছে বলে মনে হল না। একটা গাছের উপর একটা বিষন্ন দাড় কাক বসে আছে। মানুষের ধারণা বিষন্ন শুধু মানুষই হতে পারে। মানুষের এই ধারণা ঠিক না। মানুষের অধিকাংশ ধারণাই ঠিক না। এই জাতিয় গভীর বিষয় নিয়ে আমি চিন্তামগ্ন।
পরীক্ষা দিতে তেমন কেউই আসেনি। দুই একজন যারা এসেছিল তারাও দুই এক লাইন লিখেই চলে যাচ্ছে। এসব মডেল টেষ্টে কারো আগ্রহ নেই – এইচ এস সিতে ভালো করতে পারলেই হল। নাজমা ম্যাডাম চেয়ারে বসে আছেন বিখ্যাত পাতলা শাড়ি পড়ে।
হঠাৎ খেয়াল করলাম সবাই চলে গেছে একে একে। শুধু আমি হলে বসে আছি একা। নাজমা ম্যাডাম দূরে বসে আছেন। তিনি দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আচমকা আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে শুরু করলো, সময় থমকে গেল। এর নামই কি ভালোবাসা? ভালোবাসা কি এতটাই নিঃশব্দে আসে? আমি এখন কি করব? যা সত্য সেটাই বলে দেব ম্যাডামকে? আজ তো সত্য বলারই দিন। আমি সত্য বলার জন্য মানষিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
তিন মিনিট পরে যা ঘটলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ম্যাডাম আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
'অ্যাই ফাজিল ছেলে, জানালা দিয়ে হা করে তাকিয়ে ছিলে কেন?'
'আমি আমি…'
'আমি আমি কী? দেখি খাতায় কি লিখেছ? এই বয়সেই এই অবস্থা!'
'আমি তো পরীক্ষা দিচ্ছিলাম।'
'পরীক্ষা দিচ্ছিলে তো জানালা দিয়ে উকি মারছিলে কেন? বাইরে কি কাউকে টাইম দিয়ে এসেছ? নাকি জানালা দিয়ে কেউ নকল সাপ্লাই দেবে? কী ব্যাপার আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন হা করে?'
'ও।'
'ও মানে? খাতা দাও।'
এরপর তিনি খাতা নিয়ে আমাকে বের করে দিলেন। এক পলকের রঙ্গিন কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেল। টুকটুকে লাল গাড়িতে চড়ে হারিয়ে গেল কিছু জীবন্ত সময়।
নাজমা ম্যাডাম একটা লাল টুকটুকে গাড়িতে করে আসতেন। তার গাড়িটা তার মতই সুন্দর ছিল। গাড়ির ড্রাইভারের নাম মাখন। মাখনের দৃষ্টি খারাপ ছিল। ম্যাডামের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতো।
ম্যাডাম মাঝে মাঝে বলতেন, মাখন তোমার সমস্যা কী?
মাখন বলতো, ম্যাডাম চোখটা ক্যান জানি ফড় ফড় করতাছে। চোখটা ড্যামেজ হইছে মনে হয়। গরীবের চোখ – কথায় কথায় ড্যামেজ হইয়া যায়। গরীবরে দেখার কেউ নাই। গরীব হইল ড্যামেজ জিনিস।
ম্যাডাম বলতেন 'বেশী কথা বলবেনা, আমি একটু পরে আবার বের হব। গাড়ি নিয়ে রেডি থাকবে।'
নাজমা ম্যাডাম ইংলিশ পড়াতেন। তিনি ভারি ফ্রেমের চমশা পড়তেন তবে চশমাটার মধ্যে কিছু একটা ছিল, চশমার কারণে চোখ দু'টো রহস্যময় লাগতো। ম্যাডাম সুন্দর পরিপাটি করে কালার ম্যাচিং করে শাড়ি পড়তেন। তার পছন্দের রঙ সম্ভবত গোলাপী ছিল। অনুমানে বললাম। মেয়েদের পছন্দের ধরনগুলো ঘুরে ফিরে এক। ক্লাসের মেয়েরা উনাকে সহ্য করতে পারতো না। মেয়েদের বাজার উনি দখল করে ফেলেছিলেন।
ম্যাডামকে নিয়ে ক্লাসে নানান ধরনের রসালো কথাবার্তা প্রচলিত ছিল। এসব রসালো কথাবার্তার কিছু কিছু ক্লাসের মেয়েরাও বানাতো। মেয়েদের টার্গেট ছিল তাকে একজন খারাপ মহিলা হিসাবে প্রমান করা।
ম্যাডামকে নিয়ে প্রচলিত কিছু কথাবার্তা আবার বেশ অশ্লীল। যেমনঃ উনাকে দেখলে ম্যানেজম্যান্টের টিচার মোতালেব স্যারের নাকি বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে যায়, দারোয়ান হরিপদের শরীরে হুড় হুড় করে কাপুনি দিয়ে জ্বর উঠে ইত্যাদি হাবিজাবি।
ক্লাসের অনেক ছেলে ইংরেজীর নানা রকম মনগড়া সমস্যা খুজে বের করে উনার রুমে যেত সমাধান করার জন্য। উদ্দেশ্য পাতলা শাড়ি পরিহিত ম্যাডামকে একবার দেখে নেয়া।
দীপু একবার গিয়ে বলল, ম্যাডাম, একটা ট্রান্সলেশান পারছিনা। পাখি পাকা পেপে খায় – এর ইংলিশ কি?
ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে বললেন, সেটা পাখিকেই জিজ্ঞেস কর গিয়ে। যে খায় তারই জানার কথা। এইসব ফালতু প্রশ্ন নিয়ে আর কোনদিন যাতে আমার রুমে ঢুকতে না দেখি।
একবার ইংরেজীর টিচার সুব্রত স্যারকে দেখলাম ম্যাডামের রুমে ঢোকার আগে পকেট থেকে ছোট চিরুনী বের করে চুল আচরাচ্ছেন। উদ্দেশ্য স্মার্ট হয়ে ঢুকে স্মার্টনেস দিয়ে ম্যাডামকে কাবু করে ফেলা।
এক ছাত্র ব্যাপারটা দেখে ফেলে স্যারকে বিব্রত করার জন্য গিয়ে বলল, স্যার আসসালামু আলাইকুম।
স্যার তাড়াতাড়ি চিরুনী পকেটে ঢুকিয়ে বললেন, ইয়ে কিছু না।
২০০৭ সালের কথা। কলেজ লাইফের শেষ পরীক্ষা চলছিল সেদিন – মডেল টেষ্ট। আমি পরীক্ষা দিতে গেছি। গিয়ে দেখি কিছুই পারিনা, পারার কথাও না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে ধানমন্ডি লেক, অতি মনোরম দৃশ্য। আমি মনোরম দৃশ্য দেখছি জানালা দিয়ে। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে কপোত কপোতী দেখা যাচ্ছে কিছু। এরা দুজন দুজনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। দুনিয়ার সাথে এদের কোন যোগসূত্র আছে বলে মনে হল না। একটা গাছের উপর একটা বিষন্ন দাড় কাক বসে আছে। মানুষের ধারণা বিষন্ন শুধু মানুষই হতে পারে। মানুষের এই ধারণা ঠিক না। মানুষের অধিকাংশ ধারণাই ঠিক না। এই জাতিয় গভীর বিষয় নিয়ে আমি চিন্তামগ্ন।
পরীক্ষা দিতে তেমন কেউই আসেনি। দুই একজন যারা এসেছিল তারাও দুই এক লাইন লিখেই চলে যাচ্ছে। এসব মডেল টেষ্টে কারো আগ্রহ নেই – এইচ এস সিতে ভালো করতে পারলেই হল। নাজমা ম্যাডাম চেয়ারে বসে আছেন বিখ্যাত পাতলা শাড়ি পড়ে।
হঠাৎ খেয়াল করলাম সবাই চলে গেছে একে একে। শুধু আমি হলে বসে আছি একা। নাজমা ম্যাডাম দূরে বসে আছেন। তিনি দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আচমকা আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে শুরু করলো, সময় থমকে গেল। এর নামই কি ভালোবাসা? ভালোবাসা কি এতটাই নিঃশব্দে আসে? আমি এখন কি করব? যা সত্য সেটাই বলে দেব ম্যাডামকে? আজ তো সত্য বলারই দিন। আমি সত্য বলার জন্য মানষিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
তিন মিনিট পরে যা ঘটলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ম্যাডাম আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
'অ্যাই ফাজিল ছেলে, জানালা দিয়ে হা করে তাকিয়ে ছিলে কেন?'
'আমি আমি…'
'আমি আমি কী? দেখি খাতায় কি লিখেছ? এই বয়সেই এই অবস্থা!'
'আমি তো পরীক্ষা দিচ্ছিলাম।'
'পরীক্ষা দিচ্ছিলে তো জানালা দিয়ে উকি মারছিলে কেন? বাইরে কি কাউকে টাইম দিয়ে এসেছ? নাকি জানালা দিয়ে কেউ নকল সাপ্লাই দেবে? কী ব্যাপার আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন হা করে?'
'ও।'
'ও মানে? খাতা দাও।'
এরপর তিনি খাতা নিয়ে আমাকে বের করে দিলেন। এক পলকের রঙ্গিন কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেল। টুকটুকে লাল গাড়িতে চড়ে হারিয়ে গেল কিছু জীবন্ত সময়।