Archive Pages Design$type=blogging

.. সুভাস (জ্বিন)

... ২০০০ সালের দিকে জ্বিনদের হাতে কাজ কাম একটু কম ছিলো মনে হয়। কথা নাই, বার্তা নাই নতুন বউদের কাঁধে চেপে শ্বশুড় বাড়ির দিকে রওয়ানা দিতো।

এমন এক ঘটনা ঘটলো আমার এক বড়ো ভাইয়ের বিয়ের সময়। গ্রামের বিয়ে, বিয়ের সন্ধ্যায় সবাই বঊ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর টের পেলো, নতুন ভাবী একা আসেননি, উনার গ্রাম থেকে এক জ্বিন সাথে করে নিয়ে এসেছেন। বউয়ের সাথে জ্বিন ফ্রি প্যাকেজ।

নতুন ভাবী, ভারী পুরুষ কন্ঠে কথাবার্তা বলতে শুরু করলেন, কথাবার্তায় আদব কায়দার কিঞ্চিত অভাব দেখা গেলো, পানের বাটায় সুপারি নাই কেনো – এই নিয়া শ্বাশূড়িকে বিরাট ধমকা ধমকি।

জ্বিন কথাবার্তা শুরু করলে ভাবীর কষ্ট হয় বুঝা যায়, গলার রগ ফুলে যায়, নিজের হাত দিয়ে নিজের গলা চেপে ধরেন, এক জগ পানি এক চুমুকে শেষ হয়ে যায় – উপস্থিত সবাই কাজ কারবার দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।

বাড়িতে এক, দুইটা কুকুর ছিলো, সেদিন রাতে বাড়ি ভরে গেলো কুকুর দিয়ে। একটু পর পর কুকুরের সম্মিলিত চিৎকার।

জ্বিনের আবার ফর্মালিটি সেন্স ভালো, নিজের পরিচয় দিলো এভাবে ... "... আমার নাম কৃষ্ণ দাস, হিন্দু জ্বিন। কালী মন্দিরে কীর্তনে ছিলাম, এমন সময় আমার "ডাক" পড়লো"।

... "... ডাক পড়লো মানে?" – একজন সাহস করে প্রশ্ন করলো।

... "... আরে বেটা, ডাক পড়লো মানে আমারে চালান দিলো। আমার কি ভাল্লাগে এইসব দিগদারী, একটা মেয়ে বিয়ে করছে, তারে ত্যাক্ত করতে আমার কি খারাপ লাগে না? ভগবানের কীরা, আমার ও খারাপ লাগে, কিন্তু কি করমু, উপায় নাই, আমার হাত পা বাঁধা। তবে একবার যেহেতু ঢুকছি, সহজে ছাড়মু না, প্রমিজ"।

আমার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবী, পুরুষের গলায় বলে উঠেন ... "... বিয়ে করার আগে একটু খোঁজ খবর নিবি না ঠিকমতো? এখন শান্তি পাইবি আমারে না খেদানো পর্যন্ত?"

জ্বিন খেদানোর ব্যবস্থা নেওয়া হলো, প্রথম ধাপ হিসেবে এলাকার মসজিদের হুজুরকে খবর দেওয়া হলো। হুজুরকে দেখে জ্বিন গেলো ক্ষেপে –

... "... কিরে, তুই বিড়বিড় কইর‍্যা কি পড়োস? ওজু ঠিকমতো পড়োস নাই, কুরআন শরীফের আয়াত পড়া স্টার্ট করলি? তর শরীর ও তো পাক নাই, কিছুক্ষন আগে চালতা গাছের নিচে প্রস্রাব করলি, পানি নেস নাই ঠিকমতো। যাইবি না থাপ্পড় দিমু কানসা বরাবর?"

হুজুর কিছুক্ষন চুপ থেকে বলেন ... "... জ্বিন সত্য কথা বলছে, আমার পক্ষে এই জ্বিন তাড়ানো সম্ভব না। আপনারা আরো বড়ো হুজুর ধরেন"। - এ কোন বিপদ!


কিছুক্ষনের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়লো, নতুন ভাবীর উপর জ্বীনের আছর আছে। কম বয়সী মেয়েদের নিষেধ করা হলো ভাবীর রুমের আশেপাশে যাতে ভীড় না করেন। আমার চাচা, ভাইরা খুবই সাহসী, সেই সময়েও তারা সাহসের প্রমান রাখলেন, ঠাণ্ডা মাথায় সিচুয়েশন ট্যাকেল দিতে লেগে গেলেন।

হুজুর ব্যর্থ হবার পর মুরুব্বিরা মিলে ডিসিশান নিলেন, এমবিবিএস পাশ ডাক্তার দেখাবেন, এমনতো হতে পারে, যা সবাই দেখছে, তা জ্বিন ভুত টাইপের অলৌকিক কিছু না – এটা কোনো অসুখ যার চিকিৎসা আধুনিক উপায়েই সম্ভব।

আমার ছোট চাচা, ডাক্তার আনতে মটর সাইকেলে রওয়ানা দিলেন, আরেকজনকে পেছনে বসিয়ে। অন্ধকার, নিশুতি রাত – রাস্তায় নামার পর উনার মনে হলো মটর সাইকেলের অস্বাভাবিক ওজন, কেউ যেনো পেছন দিকে টেনে ধরছে। মটর সাইকেল ডানে বামে কান্নি খায় কোনো কারন ছাড়াই।

ভয় তাড়ানোর জন্য তিনি সিগারেট জ্বালান, আগুন তার মনে সাহস জোগায় খানিকটা।

পরবর্তীতে জ্বিনের সাথে চাচার কথোপকথন এর একটু নমুনা দেই, জ্বিন চাচাকে বলছে

... "... খুবতো সাহস নিয়া বার হইছিলি মটর সাইকেল নিয়া, তর পেছনে, দুইজনের মাঝখানে কে বসা ছিলো জানোস? হিহি। একবার ইচ্ছা করছিলো তর মটর সাইকেল ফালাইয়া দেই রাস্তার নিচের পানিতে, পরে মাফ করে দিছি, আমি জ্বিন খারাপ না। আমারে বেশি জ্বালাইছ না। আর তর ধারনা কি? আমি আগুন ডরাই, ভগবান, ভগবান - আরে গাধা আমার জন্মই হইছে আগুন থাইক্যা, তর সামনে কেউ মাটি ধরলে তুই ডরাইবি? তুই দেখি বিরাট গাধা"।

... "... ঠিক আছে জ্বিন ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ"

... "... খবরদার, আমারে ভাই ডাকবি না, তর কাজ কামের নাই ঠিক, দুইদিন পর আমেরিকা যাইবি; যাওয়ার আগে নিজেরে ঠিক কর"।

জ্বিনের কথা শুনে, চাচার দিকে তাকিয়ে বাকিরা, এতো কষ্টের মধ্যেও হাসে। বেইজ্জতি কাজ কারবার।

এর মধ্যে ভাবীর কিছু অস্বাভাবিক ক্ষমতা দেখা গেলো, এক আপা আল্লাদী করে ভাবীকে "আসো, আসো আমার কাছে আসো" বলে ধরতে গিয়ে এমন জোরে ধাক্কা খেলেন, বিছানা থেকে পাঁচ - ছয় হাত দূরে কাগজের প্লেনের মতো উড়াল দিয়ে গিয়ে পড়লেন। কোনো মানুষের শরীরে এতো শক্তি থাকা সম্ভব না।

ডাক্তার সাহেব, তার ডাক্তারী ব্যাগ হাতে চলে আসলেন; ভাবীর নাড়ি পরীক্ষা করতে শুরু করলেন। ভাবী গম্ভীর, ফ্যাসফ্যাসে পুরুষ গলায় কথা বলতে শুরু করলেন-

... "... ডাক্তার, তর সার্টিফিকেট ঠিক নাইরে, নকল কইর‍্যা পাশ করা ডাক্তার তুই। তবে তর বাপ ভালো ডাক্তার ছিলো, ভালো ডাক্তারের ছেলে হইছে ভূয়া ডাক্তার, বাপের নাম আর কতো বেইচ্যা খাইবি? তুইতো দাঁত তুলতে গিয়া টনসিল কাটোস; তুই আসলি আমার চিকিৎসা করতে, দাঁড়া একটু হাইস্যা লই, খিকখিক"।

পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার রিপোর্ট দিলেন ... "... এ তেমন কিছু না, বিয়ের প্রেশার নিতে না পেরে মেয়ে ট্রমায় চলে গেছে, ক্লিয়ার হিস্টোরিয়া কেইস। রাতে আরামে ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যাবে"।

... "... আর পুরূষের গলায় কথা বলার ব্যাপারটা?" – এক ভাই জিজ্জাসা করলেন।

... "... এটাও স্বাভাবিক, ডাক্তারী ভাষায় একে বলে ......"

ডাক্তারী ভাষায় একে কি বলে শুনা হলো না, ঘরের ভারী এক জানালার শক্ত খিল সবার সামনে নিজে নিজে খট করে খুলে গেলো, ভারী জানালার এক কপাট একদিকে সরে গেলো, বাতাসের মতো কিছু একটা সেদিকে ছুটে গেলো, যাওয়ার আগে, ভাবীর মাধ্যমে বলে গেল ... "...আমি একটু বাইরে গেলাম, তোরা রেস্ট নেয়, আবার আসবো, খুব তাড়াতাড়ি"।

ভাবী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন বিছানার উপর।

এক চাচা, জোরে জোরে পড়া শুরু করলেন ... "... লা ইলাহা ইন্তা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ্জালিমিন"।

পুরা বাড়ি, হঠাৎ করে একেবারে ঝিম মেরে গেলো।

ডাক্তার চুপ হয়ে গেলেন, একটু পর বললেন ... "... এটা আসলে আমাদের ব্যাপার না, ভালো কোনো হুজুর দেখান আর আমাকে বাড়ি পৌছানোর ব্যবস্থা করেন, আমার পক্ষে একা যাওয়া সম্ভব না"।

COMMENTS

Name

আমার ভাবনাগুলো
false
ltr
item
Omonibus: .. সুভাস (জ্বিন)
.. সুভাস (জ্বিন)
Omonibus
http://omonibus.blogspot.com/2016/07/blog-post_1.html
http://omonibus.blogspot.com/
http://omonibus.blogspot.com/
http://omonibus.blogspot.com/2016/07/blog-post_1.html
true
1459505652775704545
UTF-8
Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago