Archive Pages Design$type=blogging

সম্পর্ক

বেইলী রোডের অফিসার্স ক্লাবের সামনেই তিথির সাথে হুট করে আমার দেখা হয়ে গেলো।
ফুটপাত ধরে হেটে যাচ্ছি।অসংখ্য কপোতকপতী বসে আছে।হঠাৎ একটা হাসি শুনে থমকে দাঁড়ালাম।অবিকল তিথির হাসি। আমার বুক ধরফর করতে লাগলো। এইই কি তিথি। যাকে একবার দেখার জন্য আমি এতোদিন অপেক্ষা করছি?
পিছনে ফিরতেই দেখি একটা ছেলের হাত ধরে হাসতে হাসতে হাটছে তিথি। হাতে আইসক্রিম।বেগুনী রঙের সালোয়ার কামিজে তাকে ইন্দ্রপুরীর রাজকন্যা লাগছে।
.
তিথি আগের থেকে অনেকখানি বদলিয়েছে।শেষ দেখার সময় ও অসুস্থ ছিলো।প্রায় সময় কাঁদতো বলে চোখ ফুলে লাল হয়ে থাকতো। গাল ভেঙ্গে ভেতরে ঢেবে গিয়েছিলো।এখন স্বাস্থ্য আগের থেকে বেশ ভালো হয়েছে।মুখে ব্রণের সমস্যা ছিলো। সেটাও নেই।মাথার চুল গুলো সম্ভবত কিছু একটা করিয়েছে। ওর গোলগাল মুখটা হঠাৎ করেই লম্বাটে লাগছে। নাকি আগে থেকেই ওর মুখ লম্বাটে ছিলো?? মনে পড়ছে না।
লম্বাটে মুখ নাকি মডেলিং এর জন্য ভালো - তিথি বলতো। খুব ইচ্ছে ছিলো তার মডেল হবার। ফটোশুট করানোর জন্য প্রায়ই ব্যস্ত হয়ে পড়ত। আমার এগুলো কখনোই ভালো লাগেনি। খুব বিরক্ত হতাম।কতো শত ঝগড়া হতো এগুলো নিয়ে নিজেদের মাঝে।তার ধারণা আমি তাকে আটকিয়ে রাখছি। তার স্বপ্ন থেকে তাকে বঞ্চিত করছি। অথচ আমার চোখে তাকিয়ে সে আমার স্বপ্নটা দেখতো পেতো না।। প্রচুর ছেলে বন্ধু ছিলো তার। সেটা আমার সমস্যা ছিলো না। সমস্যা ছিলো ছেলেগুলোর চোখে বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু দেখতে পেতাম আমি। বিভিন্ন অজুহাতে গা ছুঁয়ে দেয়াটা আমার পছন্দ হতো না। তিথিকে এই ব্যাপারে কিছু বললেই ঝগড়া লেগে যেতো।
তিথি কিছুই বুঝতো না। কিংবা কে জানে বুঝেও হয়তো আমাকে বুঝতে দিতো না।
তবে,বুঝতে পারতাম হারিয়ে ফেলবো তিথিকে। ওকে ধরে রাখার সামর্থ্য নেই আমার। তাও কম চেষ্টা করিনি।
মডেল হবার ভুতটা ভালোই তার মাথায় চেপেছিলো। নতুন ডিএসএলআর কিনে, নিজের একটা পেইজ খুলে বসে থাকা ছেলেটাও যখন ওকে মডেল হবার স্বপ্ন দেখাতো, তিথি সেটাও বিশ্বাস করতো। নিজেই একসময় ভাবলাম ওর জন্য ডিএসএলআর কিনে দেই। ডিএসএলআর কেনার জন্য নিজের শখটা তুচ্ছ করে তিল তিল করে টাকা জমিয়ে কেনা গিটারটা সাজ্জাদের কাছে বিক্রি করে দিলাম। বিক্রির দিন সাজ্জাদ বড় বড় চোখ করে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে বলেলো, "ভাই আপনে সত্যিই বিক্রি করতেছেন? "
ক্লান্ত ভঙ্গিতে হেসে বললাম, "হ্যা, রে। ''
আমার চোখে কষ্টটা তিথি না দেখতে পেলেও সাজ্জাদ সেদিন ঠিকই দেখতে পেয়েছিলো।
.
সম্পর্কের শেষের দিকে আমাদের ঝগড়া গুলোতে তৃতীয় পক্ষ আসতো। সেই তৃতীয় পক্ষের কথা তিথি আমাকে না বললেও বুঝতাম, আমাদের রিলেশনের মাঝে কেউ ঢুকতে শুরু করেছে।
এরই মাঝে তিথির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই অবস্থাতেও তিথির সাথে আমার ঝগড়া হতো। ঝগড়াগুলো সব তৃতীয়পক্ষকে নিয়েই হতো। আমি তিথিকে বোঝাতে পারতাম না, তিথি আমাকে বোঝাতে পারতো না।
.
সম্পর্কের শুরুটা তিথির হাত দিয়েই হয়েছিলো। শেষটাও হলো তিথিকে দিয়েই। নিজ হাতে ভেঙ্গে দিলো সব।এক রাতে ভালোবাসার নিবেদন জানিয়ে আমার কাছে এসেছিলো। ঠিক ওই তারিখেই ভালোবাসা ফিরিয়ে নিলো। ভেবেছিলাম পাগলের মত ভালোবাসে আমাকে। থাকবে পারবে না হয়তো আমাকে ছাড়া। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে দিব্যি ভালোই দিন কাটাতে লাগলো সে। ভুলেও পিছু ফিরে তাকালো না। ব্রেকআপ এর কিছুদিন পরেই তাকে বেইলী রোডে দেখি আরেকটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো। সেই শেষ দেখা । আজ অনেকদিন পরে তাকে দেখে মনে পড়ে গেলো।
.
তিথির সাথের ছেলেটা একটা রিকশা ঠিক করলো। রিকশায় উঠে তিথি ছেলেটার হাত ধরে রাখলো।
.
একসময় শক্ত করে আমার হাত ধরে রাখতো তিথি । বৃষ্টিতে হাত ধরে ভিজেছি আমরা। রাতের পর রাত কথা বলেছি। ঝগড়ার পরে দেখা হলো বলতো, "আমরা কোনোদিন আলাদা হবো না "।
'পাগলি মেয়ে ' বলেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম তার।
.
আচ্ছা তিথির কি এই দিনগুলোর কথা এখন মনে পড়ে?

COMMENTS

Name

আমার ভাবনাগুলো
false
ltr
item
Omonibus: সম্পর্ক
সম্পর্ক
Omonibus
http://omonibus.blogspot.com/2016/07/blog-post_81.html
http://omonibus.blogspot.com/
http://omonibus.blogspot.com/
http://omonibus.blogspot.com/2016/07/blog-post_81.html
true
1459505652775704545
UTF-8
Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago