স্বর্গীয় অনুপাত নিয়ে অনেক আগে থেকেই খুব সন্দিহান ছিলাম। কেউই এই বিষয়ে কিছুই জানত না। অথচ আমাদের সবার শরীরে এ অনুপাত ১.৬১ বিদ্যমান।তাক লাগানোর মত তথ্য। ভিঞ্চির ভিট্রুভিয়ানের গবেষনার উপর আকা এই চিত্র আসলেই কৃতিত্বের দাবিদার। নিচের তথ্যগুলো দি দ্য ভিঞ্চি কোড, লস্ট সিম্বল, মুক্তমনা, আরো বিভিন্ন বই থেকে নিয়েছি। অংকের প্রতি আকৃষ্ট ব্যাক্তিদের মজা লাগবে হয়তো। ভিট্রুভিয়ান ম্যান এবং ঐশ্বরিক অনুপাত।
রাত তখন অনেক গভীর, সবাই ঘুমিয়ে গেছে। একজন মানুষের কোনো ঘুম নেই। লম্বা একটা জোব্বা গায়ে, শশ্রুমন্ডিত লোকটি বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। একটা লণ্ঠন একহাতে ধরে আরেক হাতে ধরেছে একটা গাঁইতি। গা ছমছমে পরিবেশে লোকটির যেনবা কোনোই ভয়-ডর নেই। সে গিয়ে ঢুকলো একটা কবরস্থানে। কোথাও ডেকে উঠলো একটা নিশাচর প্রাণী। গাঁইতি হাতে লোকটি, সদ্য কবর দেয়া একটা কবরে চলে গেল। খুড়তে শুরু করলো গাঁইতি দিয়ে। একসময় বেরিয়ে পড়লো কফিনটা। তারপর সেই কফিন থেকে লাশটা বের করে কাঁধে তুলে নিল লোকটা – একটুও ভয়-ডর নেই। লাশটাকে অন্ধকারে, চুপি চুপি নিয়ে এলো নিজের ঘরে। ঘরটায় যন্ত্রপাতি দিয়ে ঠাসা। মেঝেতে শুইয়ে রাখলো লাশটাকে। এবার আসল কাজ শুরু: লাশটাকে মেঝেতে বিছিয়ে রেখে লোকটি তার যন্ত্রপাতি নিয়ে শুরু করলো… কাটাছেঁড়া?? না, শুরু করলো জ্যামিতি।
ইতালির ভেনিসে, গ্যালারি দেল'এ্যাকাদেমিয়া-তে একটা চিত্রকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক দর্শক। খুব অল্প সময়ের জন্য চিত্রকর্মটির প্রদর্শনী হচ্ছে বলে প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছে চিত্রকর্মটি দেখার জন্য, তাই সে বেশিক্ষণ সময় পাবে না এই ছোট্ট চিত্রকর্মটির সামনে থাকার। তবু সে একবার তাকায় নিজের টি-শার্টের বুকে ছাপা করা ছবিটির দিকে, আরেকবার তাকায় সামনের হলদে পাতায় আঁকা চিত্রকর্মটির দিকে: ভিট্রুভিয়ান ম্যান।
মার্কাস ভিট্রুভিয়াস পোলিও (Marcus Vitruvius Pollio), প্রাচীন রোমের একজন স্থপতি। একটা বই লিখলেন তিনি, নাম "দে আর্কিতেকচুরা"। বিশাল বইটির তৃতীয় খন্ডে লিখলেন এক আশ্চর্য বিষয়: স্থাপত্যের আদি নীতির কেন্দ্রবিন্দু নাকি মানুষ। তিনি তাঁর বইতে বর্ণনা করলেন, মানুষ নাকি আশ্চর্য কিছু অনুপাতের মিশেল। তিনি এই অনুপাতগুলোকে স্থাপত্যের উপজীব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন।
বহু দূরে প্রায়ান্ধকার একটা কক্ষে এই বইটিই পড়ছিলেন একজন লোক। নাম তাঁর লিওনার্দো, ইতালির ভিঞ্চি গ্রামে জন্মগ্রহণ করায় তাঁকে সবাই ডাকে ভিঞ্চির লিওনার্দো, বা লিওনার্দো অফ ভিঞ্চি— লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। আজব সব শখ ছিল তাঁর, তারই একটা ছিল কবর থেকে লাশ তুলে এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষ
া করা। কখনও কাটাছেঁড়া করে শারীরবিজ্ঞান-রহস্যোদ্ঘাটন, কিংবা কখনও জ্যান্ত মানুষকে দিয়ে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না, সেসবের আয়োজন। বিচিত্র এই মানুষটি ভিট্রুভিয়াসের বইয়ে মানুষ সম্পর্কে লেখা সেই অনুপাতের বিষয়টি পড়ে দারুণ রোমাঞ্চিত হলেন। চিত্রকর মানুষ, মনের মাঝে সবকিছুই ছবির মতো ভাসে… তিনি ঠিক করলেন এই অনুপাতের বিষয়টিকে চিত্রে রূপ দিবেন। সালটা আনুমানিক ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ, জন্ম হলো ভিট্রুভিয়ান ম্যান-এর।
লিওনার্দো সব সময় তাঁর সঙ্গে রাখতেন কিছু নোটবুক। সেসব নোটবুকে তিনি যেমন লিখতেন তাঁর গবেষণালব্ধ বিভিন্ন বিষয়, তেমনি আঁকতেন বহু বহু ছবি। কিন্তু লিখতেন বড় আশ্চর্য ভঙ্গিতে, ইতালীয় ভাষায়, সব উল্টো হরফে। ফলে নোটবুকের লেখার মর্মোদ্ধার করতে দরকার হবে আয়নার। তারই একটা পাতায় তিনি আঁকলেন এই চিত্রকর্মটি-
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ভিট্রুভিয়ান ম্যান, ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ
ছবিটিতে দেখা যায় একজন মানুষ, একটা বৃত্ত এবং একটা বর্গক্ষেত্রের মধ্যে খুব সাজুয্যপূর্ণভাব
েই এঁটে যান। চলুন লিওনার্দো'র নোটবুক থেকেই এর ব্যাখ্যাটা শোনা যাক:
"… আপনি যদি আপনার পা-দুটো দুপাশে এমনভাবে ছড়ান, যাতে আপনার উচ্চতা ১/১৪[চৌদ্দ ভাগের এক ভাগ] কমে যাবে; এবং আপনার হাতদুটো দুই পাশে মেলে ধরেন, এমনভাবে যেন আপনার হাতের মধ্যমা আঙ্গুলটির ডগা ঠিক আপনার মাথার চূঁড়ার সমান হয়, তাহলে আপনার হাত দুটো আর পা দুটোর অবস্থানকে স্পর্শ করে পুরোপুরি একটা বৃত্ত আঁকা যাবে আর আপনার নাভি হবে সেই বৃত্তের কেন্দ্র; এই দুই পায়ের মাঝখানের ফাঁকটি হুবহু একটি সমবাহু ত্রিভুজ তৈরি করবে।" {"The Notebooks of Leonardo da Vinci" edited by Irma A. Richter}
এই বর্ণনাসহ নোটবুকে বর্ণিত লিওনার্দো'র অন্যান্য বর্ণনা ও চিত্রকর্ম থেকে যে বিষয়গুলো জানা যায়:
দুদিকে সমানভাবে প্রসারিত হাতের এমাথা-ওমাথা মাপ আসলে ঐ মানুষটির উচ্চতা।
চুলের গোড়া থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত দূরত্ব হলো একজন মানুষের সম্পূর্ণ উচ্চতার ১০ ভাগের ১ ভাগ।
থুতনির নিচ থেকে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো একজন মানুষের উচ্চতার ৮ ভাগের ১ ভাগ।
বুকের উপর থেকে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৬ ভাগের ১ ভাগ
বুকের উপর থেকে চুলের গোড়া পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৭ ভাগের ১ ভাগ
কাঁধের সর্বোচ্চ দূরত্ব হলো উচ্চতার ৪ ভাগের ১ ভাগ
স্তন থেকে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৪ ভাগের ১ ভাগ
কনুই থেকে হাতের অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৪ ভাগের ১ ভাগ (যাকে আমরা বাংলায় বলি: প্রত্যেকে যার যার হাতে সাড়ে তিন (৩.৫) হাত। দশমিক বাদ দিলে তা হয় ৪ হাত)
কনুই থেকে বোগল পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৮ ভাগের ১ ভাগ
সম্পূর্ণ হাতের দূরত্ব হলো উচ্চতা।।
পড়ে পাগল হলে আমার দোষ না।
রাত তখন অনেক গভীর, সবাই ঘুমিয়ে গেছে। একজন মানুষের কোনো ঘুম নেই। লম্বা একটা জোব্বা গায়ে, শশ্রুমন্ডিত লোকটি বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। একটা লণ্ঠন একহাতে ধরে আরেক হাতে ধরেছে একটা গাঁইতি। গা ছমছমে পরিবেশে লোকটির যেনবা কোনোই ভয়-ডর নেই। সে গিয়ে ঢুকলো একটা কবরস্থানে। কোথাও ডেকে উঠলো একটা নিশাচর প্রাণী। গাঁইতি হাতে লোকটি, সদ্য কবর দেয়া একটা কবরে চলে গেল। খুড়তে শুরু করলো গাঁইতি দিয়ে। একসময় বেরিয়ে পড়লো কফিনটা। তারপর সেই কফিন থেকে লাশটা বের করে কাঁধে তুলে নিল লোকটা – একটুও ভয়-ডর নেই। লাশটাকে অন্ধকারে, চুপি চুপি নিয়ে এলো নিজের ঘরে। ঘরটায় যন্ত্রপাতি দিয়ে ঠাসা। মেঝেতে শুইয়ে রাখলো লাশটাকে। এবার আসল কাজ শুরু: লাশটাকে মেঝেতে বিছিয়ে রেখে লোকটি তার যন্ত্রপাতি নিয়ে শুরু করলো… কাটাছেঁড়া?? না, শুরু করলো জ্যামিতি।
ইতালির ভেনিসে, গ্যালারি দেল'এ্যাকাদেমিয়া-তে একটা চিত্রকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক দর্শক। খুব অল্প সময়ের জন্য চিত্রকর্মটির প্রদর্শনী হচ্ছে বলে প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছে চিত্রকর্মটি দেখার জন্য, তাই সে বেশিক্ষণ সময় পাবে না এই ছোট্ট চিত্রকর্মটির সামনে থাকার। তবু সে একবার তাকায় নিজের টি-শার্টের বুকে ছাপা করা ছবিটির দিকে, আরেকবার তাকায় সামনের হলদে পাতায় আঁকা চিত্রকর্মটির দিকে: ভিট্রুভিয়ান ম্যান।
মার্কাস ভিট্রুভিয়াস পোলিও (Marcus Vitruvius Pollio), প্রাচীন রোমের একজন স্থপতি। একটা বই লিখলেন তিনি, নাম "দে আর্কিতেকচুরা"। বিশাল বইটির তৃতীয় খন্ডে লিখলেন এক আশ্চর্য বিষয়: স্থাপত্যের আদি নীতির কেন্দ্রবিন্দু নাকি মানুষ। তিনি তাঁর বইতে বর্ণনা করলেন, মানুষ নাকি আশ্চর্য কিছু অনুপাতের মিশেল। তিনি এই অনুপাতগুলোকে স্থাপত্যের উপজীব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন।
বহু দূরে প্রায়ান্ধকার একটা কক্ষে এই বইটিই পড়ছিলেন একজন লোক। নাম তাঁর লিওনার্দো, ইতালির ভিঞ্চি গ্রামে জন্মগ্রহণ করায় তাঁকে সবাই ডাকে ভিঞ্চির লিওনার্দো, বা লিওনার্দো অফ ভিঞ্চি— লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। আজব সব শখ ছিল তাঁর, তারই একটা ছিল কবর থেকে লাশ তুলে এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষ
া করা। কখনও কাটাছেঁড়া করে শারীরবিজ্ঞান-রহস্যোদ্ঘাটন, কিংবা কখনও জ্যান্ত মানুষকে দিয়ে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না, সেসবের আয়োজন। বিচিত্র এই মানুষটি ভিট্রুভিয়াসের বইয়ে মানুষ সম্পর্কে লেখা সেই অনুপাতের বিষয়টি পড়ে দারুণ রোমাঞ্চিত হলেন। চিত্রকর মানুষ, মনের মাঝে সবকিছুই ছবির মতো ভাসে… তিনি ঠিক করলেন এই অনুপাতের বিষয়টিকে চিত্রে রূপ দিবেন। সালটা আনুমানিক ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ, জন্ম হলো ভিট্রুভিয়ান ম্যান-এর।
লিওনার্দো সব সময় তাঁর সঙ্গে রাখতেন কিছু নোটবুক। সেসব নোটবুকে তিনি যেমন লিখতেন তাঁর গবেষণালব্ধ বিভিন্ন বিষয়, তেমনি আঁকতেন বহু বহু ছবি। কিন্তু লিখতেন বড় আশ্চর্য ভঙ্গিতে, ইতালীয় ভাষায়, সব উল্টো হরফে। ফলে নোটবুকের লেখার মর্মোদ্ধার করতে দরকার হবে আয়নার। তারই একটা পাতায় তিনি আঁকলেন এই চিত্রকর্মটি-
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ভিট্রুভিয়ান ম্যান, ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ
ছবিটিতে দেখা যায় একজন মানুষ, একটা বৃত্ত এবং একটা বর্গক্ষেত্রের মধ্যে খুব সাজুয্যপূর্ণভাব
েই এঁটে যান। চলুন লিওনার্দো'র নোটবুক থেকেই এর ব্যাখ্যাটা শোনা যাক:
"… আপনি যদি আপনার পা-দুটো দুপাশে এমনভাবে ছড়ান, যাতে আপনার উচ্চতা ১/১৪[চৌদ্দ ভাগের এক ভাগ] কমে যাবে; এবং আপনার হাতদুটো দুই পাশে মেলে ধরেন, এমনভাবে যেন আপনার হাতের মধ্যমা আঙ্গুলটির ডগা ঠিক আপনার মাথার চূঁড়ার সমান হয়, তাহলে আপনার হাত দুটো আর পা দুটোর অবস্থানকে স্পর্শ করে পুরোপুরি একটা বৃত্ত আঁকা যাবে আর আপনার নাভি হবে সেই বৃত্তের কেন্দ্র; এই দুই পায়ের মাঝখানের ফাঁকটি হুবহু একটি সমবাহু ত্রিভুজ তৈরি করবে।" {"The Notebooks of Leonardo da Vinci" edited by Irma A. Richter}
এই বর্ণনাসহ নোটবুকে বর্ণিত লিওনার্দো'র অন্যান্য বর্ণনা ও চিত্রকর্ম থেকে যে বিষয়গুলো জানা যায়:
দুদিকে সমানভাবে প্রসারিত হাতের এমাথা-ওমাথা মাপ আসলে ঐ মানুষটির উচ্চতা।
চুলের গোড়া থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত দূরত্ব হলো একজন মানুষের সম্পূর্ণ উচ্চতার ১০ ভাগের ১ ভাগ।
থুতনির নিচ থেকে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো একজন মানুষের উচ্চতার ৮ ভাগের ১ ভাগ।
বুকের উপর থেকে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৬ ভাগের ১ ভাগ
বুকের উপর থেকে চুলের গোড়া পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৭ ভাগের ১ ভাগ
কাঁধের সর্বোচ্চ দূরত্ব হলো উচ্চতার ৪ ভাগের ১ ভাগ
স্তন থেকে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৪ ভাগের ১ ভাগ
কনুই থেকে হাতের অগ্রভাগ পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৪ ভাগের ১ ভাগ (যাকে আমরা বাংলায় বলি: প্রত্যেকে যার যার হাতে সাড়ে তিন (৩.৫) হাত। দশমিক বাদ দিলে তা হয় ৪ হাত)
কনুই থেকে বোগল পর্যন্ত দূরত্ব হলো উচ্চতার ৮ ভাগের ১ ভাগ
সম্পূর্ণ হাতের দূরত্ব হলো উচ্চতা।।
পড়ে পাগল হলে আমার দোষ না।