Archive Pages Design$type=blogging

রুমডেট

.
রুমটার দিকে ভালকরে একবার তাঁকালাম। নাহ্, কোন খুঁত নেই।আমার যেরকম পছন্দ ঠিক তেমন ভাবেই রুমটা সাজিয়েছে। পানি, টিস্যুবক্স, গুছানো বিছানা, সবই একেবারে পারফেক্ট। মনে মনে রফিক নামে ছেলেটার পিঠ চাপড়ে দিলাম। যাওয়ার সময় কয়েকটা টাকা বেশি দিতে হবে ছেলেটাকে। একটু পর রেশমা আসবে। রেশমার আগেও ৬ টা মেয়েকে আমি এই রুমটাতে এনেছি। রেশমা আমার লাকি সেভেন।
.
ভার্সিটিতে প্রথম দেখাতেই ওর পুরু লাল ঠোঁট, উন্নত বুক আর নিতম্বের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।সেদিন থেকেই এই দিনটার স্বপ্ন দেখে আসছি। আজ সেই স্বপ্ন পূরণের দিন। মেয়ে পটানো আমার জন্য মিডটার্মে ৫ নম্বর তোলার চেয়েও অনেক বেশি সহজ কাজ। তবু এই মেয়েটাকে পটাতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অসহ্য রকমের ভদ্র মেয়েটা।
.
ওকে দেখেই বুঝেছিলাম ও আমার মত ছেলেকে পছন্দ করবে না। তাই ওর জন্য সাময়িকভাবে হেয়ারস্টাইল থেকে শুরু করে সিগারেটটা পর্যন্ত ছাড়লাম। ভদ্র দেখানোর জন্য যা যা দরকার সব করলাম। বান্ধবীদের দিয়ে ওর কাছে নিজের প্রশংসা করালাম। এতে ওর মনে আমার সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা তৈরি হল। নিজেকে ব্রিলিয়ান্ট ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ক্লাসে ফার্স্ট বয়ের তৈরি করা শিটগুলো নিজের বলে ওকে দিতাম। সবধরনের সাপোর্ট দিয়েছি ওকে। মোটামুটি একটা ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল এতে। প্রায় একমাস পর সুযোগ বুঝে ওকে প্রপোজ করলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও রিজেক্ট করে দিল।
.
এবার শুরু করলাম আমার অন্য পদ্ধতি। ইমোশনাল এটাক। টানা কিছুদিন ক্যাম্পাসে যাইনি। বন্ধুদের দিয়ে ওকে বলিয়েছি যে আমি ওর জন্য নিজেকে শেষ করে ফেলছি,,সিগারেটও নাকি ধরেছি। আসলে তখন আমি সিলেট ট্যুরে ছিলাম। তারপর ক্যাম্পাসে গিয়ে নিজেকে ওর সামনে অনেকটাই এলোমেলো ভাবে প্রকাশ করলাম।এমন একটা ভাব যেন আমার কোন কিছুতেই খেয়াল নেই, আনমনা। কিছুতেই কিছু হলনা। কিন্তু আমিও ছাড়বার লোক নই। তাই শেষ পর্যন্ত ওর সামনে দাঁড়িয়ে হাত কেটে ওর নাম লিখলাম। পুরনো সেই ইমোশনাল টর্চার এটা। কিন্তু এতেই কাজ হল, কেঁদে উঠল ও। হাতটা চেপে ধরে কাঁদল। ভালবেসে ফেলল আমাকে।
.
ভালবাসাটা পাবার পরই শুরু হল আমার আসল কাজ। কিভাবে ওকে রুমডেটের জন্য রাজি করানো যায়। অনেক কিছু করলাম কিন্তু ওকে রাজি করাতে পারিনি। এসব অতিভদ্র মেয়েকে নিয়ে এই একটা সমস্যা। কোনকিছুতেই যখন কিছু হলনা তখন আবারো শুরু করলাম সেই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল। অবশেষে রাজি হল ও। যার ফলাফল আজকের এই রুমডেট। ঘড়িটা দেখলাম একবার, ওর আসার সময় হয়ে গেছে। আস্তে করে ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে একটা গোপন জায়গায় সেট করলাম। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল,,, এসে গেছে রেশমা।
.
২ ঘন্টা পর--
.
একটু হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আড়মোড়া ভেঙে পাশে হাত দিলাম। কিন্তু রেশমাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। আমি ঘুমানোর সময় হয়তো চলে গেছে ও। চলে যাক, এখন আর ওকে দরকার নেই আমার। এতদিনের কষ্ট সার্থক আমার। রেশমার সতীত্বের অহংকার আজে ভেঙে দিয়ে এ দুটি হাতে। পৈশাচিক একটা আনন্দ পাচ্ছি যেন। ওহ্, ক্যামেরাটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। দেখতে হবে তো ভিডিওটা কেমন হয়েছে।বিছানা থেকে নেমে ক্যামেরাটার কাছে গেলাম। ক্যামেরাটা তোলার সময় ওটার নিচে একটা কাগজ দেখতে পেলাম। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে যে আমি কোন কাগজ রাখিনি ওখানে। কাগজটা কোথা থেকে এল বুঝতে পারছি না। তাহলে কি......? কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলাম---
.
প্রিয় সুমন,
এখনো কেন তোমাকে প্রিয় বলছি সেটা ভেবে অবাক হচ্ছ, তাইনা?? হ্যা, সব জানতাম আমি। আমার শরীরটা পাবার জন্য তোমার ভালবাসার অভিনয়, আগের ছয়টা মেয়ের সর্বনাশ, এই ক্যামেরাটা, সব জানি আমি। তবু তোমাকে প্রিয় বলছি, কারণ তোমাকে ভালবেসেছিলাম। আর আমার মত মেয়েরা একবারই ভালবাসে। চাইলে আমি আজ নাও আসতে পারতাম বা ভিডিওটা নষ্ট করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি কারণ নিজেকে নিঃশেষ করে হলেও আমি চাইতাম তোমার ইচ্ছে পূরণ হোক। আর কখনো তোমার সামনে আসব না। কোন অধিকারও চাইব না। ভিডিওটা তুমি ইচ্ছে করলে নেটে আপলোড দিতে পার।নিজেকে শেষ করে দেবার আগে অন্তত এটা ভেবে সান্তনা পাব যে, আমার সর্বনাশ তার হাতেই হয়েছে যাকে আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম।
ইতি
রেশমা
.
লেখাটা পড়ে অজান্তেই বুকটা কেমন যেন একটু মোচড় দিয়ে উঠল। কিন্তু এরকম তো হয়নি আগে কখনো। চিঠিটা ফেলে দিতে গিয়েও কি মনে করে আবার বুকপকেটে রেখে দিলাম। তারপর বের হয়ে এলাম রুম থেকে। অনেক কাজ বাকি আমার।
.....
.....
সুমনের কাছ থেকে ফেরার পর অসহনীয় দুটো দিন কাটল। এই দুটো দিনের প্রতিক্ষণে অপরাধবোধ আমাকে কুরে কুরে খেয়েছে। জীবনটার মানেটা হারিয়ে ফেলেছি আমি। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও যেন হারিয়ে গেছে। আজ কোথা থেকে যেন পাত্রপক্ষ এসেছে আমাকে দেখতে। কিন্তু এ জীবনে এই মনটা তো আর কাউকে দিতে পারব না। তবু মায়ের কথা ভেবে ওদের সামনে গেলাম। ছেলের বাবা মা বসে আছে। ছেলে এখনো আসেনি, কোথায় নাকি আটকে গেছে। ছেলের বাবা মা আমার মাথায় হাত রেখে আদর করলেন।উনাদের নাকি আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমি তো জানি এটা সম্ভব না। আমি তো শেষ হয়ে গেছি। আমি আর কাউকে ঠকাতে পারব না।
.
ড্রয়িংরুম থেকে নিজের রুমে ফিরেই ড্রয়ারটা খুললাম। হ্যা বিষের বোতলটা এখনো আছে। সুমনের মুখটা একবার মনে করে বিষের বোতলটা হাতে নিলাম। এমন সময় কার যেন কন্ঠ শুনতে পেলাম-
.
--ভেতরে আসতে পারি??
.
এটা তো সুমনের কন্ঠ। কিন্তু ও এখানে আসবে কিকরে। এসব ভাবতে ভাবতেই লোকটা ভেতরে ঢুকল। হ্যা সুমনই তো। কিন্তু ও এখানে কেন---
.
--তুমি এখানে??
--হ্যা, বাবা মায়ের সাথে এসেছি। উনারা ড্রয়িংরুমে বসে আছেন
--তারমানে ---
--হ্যা,,আমিই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।এই দুইটাদিন একটা অপরাধবোধে জর্জরিত হয়েছি বারবার। তোমাকে সত্যিকারের ভালবাসার একটা সুযোগ দেবে?? বিয়ে করবে আমাকে???
.
সুমনের মুখের কথাটা আমার কাছে যেন স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। কিছুতেই কান্না আটকে রাখতে পারছি না। চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে জলে। মাথায় সুমনের হাতের ছোঁয়া পেলাম। সান্তনা দিচ্ছে আমাকে। হ্যা, এখন আমার ভাল লাগছে। মনে প্রাণে চাইছি এভাবেই যেন এ হাতটা সারাজীবন আমার মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে।।

COMMENTS

Name

আমার ভাবনাগুলো
false
ltr
item
Omonibus: রুমডেট
রুমডেট
Omonibus
http://omonibus.blogspot.com/2016/07/blog-post_22.html
http://omonibus.blogspot.com/
http://omonibus.blogspot.com/
http://omonibus.blogspot.com/2016/07/blog-post_22.html
true
1459505652775704545
UTF-8
Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago