অভ্যর্থনা কক্ষে যে সুন্দরী মেয়েটি হাসি হাসি মুখ করে জ্বী স্যার! জ্বী স্যার! করছেন, তার দিকে একটু ঝুকে গিয়ে বললাম -ম্যাডাম কাগজের ফুল দেখেছেন কখনো? আমার প্রশ্নটি মেয়েটির বুঝার কথা নয়। প্রশ্নটিও একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।
- সরি স্যার
-কাগজের ফুল দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু ঘ্রাণ নেই। রিসেপসনে এই যে আপনারা যেসব সুন্দরী মেয়ে বসে থাকেন তারাও ঠিক একই রকম। এই যে ধরেন সারা রাত হাজবেন্ডের সাথে ঝগড়া করেছেন ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে অথচ পরদিন খুব সেজেগুজে হাসি হাসি মুখ করে বলতেই হবে জ্বী স্যার! জ্বী স্যার!
মেয়েটি এবার শুকনো মুখে খুব কষ্ট করে একটুখানি হাসল।
পেছনে এমদাদ ভাই আমাকে চিমটি কেটে চুপিচুপি বলছেন, এই বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! আমার মতো বাউন্ডুলের হঠাৎ চট্টগ্রামে কাজ পড়ার কোন কারণ নেই। এমদাদ ভাই একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনিই নিয়ে এসেছেন আমাকে তাকে দুই দিন সঙ্গ দেয়ার জন্য। এ রকম অভিজাত হোটেলে প্রবেশ করতেই এমন কাগুজে ফুল দেখে মনটা হু হু করে উঠল। কিন্তু এমদাদ ভাই বেশিদূর এগুতে দিলেন না।
০২.
আমার তখনো ঘুম ভাঙ্গেনি। এমদাদ ভাই রেডি হয়ে বের হবেন। উনার সাড়ে নয়টায় মিটিং আছে। হঠাৎ এমন সময় দরজায় কেউ নক করল তারপর ফুলের একটা তোড়া নিয়ে এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে বললেন অরণ্য চৌধুরী এটা আপনার জন্য রিসেপসনের সেই মেয়েটি পাঠিয়েছে। কেমন করে দু কথায়ই এমন সুন্দরী ললনাদের কাবু করে দিতে পারো তুমি? আমাকে একটু শিখিয়ে দিতে পারো ভাই? কত দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতে হয় আমার!
মুখে একটুখানি হাসি আনা ছাড়া এ সময় বলার মতো তেমন কিছু থাকে না।
সেদিন সন্ধ্যায় এমদাদ ভাইয়ের মিটিং তখনো শেষ হয়নি।এদিকে আমি আর রুপা হাটছি পাশাপাশি দিদার মার্কেটের সামনে দিয়ে। ও নিজেই কথা বলা শুরু করল
-আপনার সাথে কতদিন পর দেখা তাই না?
- গতকালই তো তোমার সাথে দেখা হল রিসেপসনে। আমি বেশ কৌতুক করলাম।
-এখনো তো তাই করছেন! সিরিয়াস হন একটু প্লিজ। কি করছেন এখন? হঠাৎ এখানে কেন?
- আমি বাউন্ডুলে আর আমার মতো যারা তাদের কাজ ব্যস্ত মানুষদের সঙ্গ দেয়া। এখানেও সেটাই করছি। তোমার কথা বলো?
- আমার কথা শোনার দরকার নেই। বলার মতোও তেমন কিছু নেই। মাস্টার্স শেষ হতে না হতেই বাবা মারা গেলেন। ছোট বোন আর অসুস্থ মা। ওদেরকেই টানছি এখন খুব কষ্ট করে।
- এর চেয়ে ভাল কিছু করতে পারো। বরাবরই তো তোমার রেজাল্ট ভাল ছিল?
- সে সুযোগটা পেলাম কোথায়?
-হুম। ডিপার্টমেন্টে আমাদের কিন্তু তেমন কথা হত না। অথচ এখন তোমার সাথে বেশ সহজভাবেই কথা বলছি।মেয়েদের প্রতি যে জড়তা ছিল সেটা এখন আর আমার খুব একটা নেই বললেও চলে তাই নয় কি?
-জানি না আগে আপনি কেমন ছিলেন তবে সিনিয়র ভাইদের সাথে আমার কথা বলা নিষেধ ছিল।
- এখন নেই কেন?
- নেই তাই নেই। আপনি সব জেনেও কিন্তু ন্যাকামো করছেন।
-তোমরা বিয়ে কেন করলে না তা কিন্তু জানি না!
- জানার দরকার নেই। আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলব?
সত্যি করে জবাব দিবেন?
- হু, বল
-ইউনিভাসিটিতে আমি যখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন রোজ বুধবার আমার ব্যাগে সুযোগ বুঝে কে গোলাপ দিয়ে যেত?
- এই জন্যই বুঝি আজ সকালে সব গোলাপ পরিশোধ করে দিলে?
-না। সবকিছু পরিশোধ করা যায় না। আমার শুধু এটুকুই জানার ছিল।
- দেবার নেই কিছু?
-নেবার শক্তি কি আপনার আছে?
হঠাৎ সামনের পথটুকু ঝাপসা মনে হলো। জীবন সত্যিই বিচিত্র। রুপা বলল, সামনে আমার বাসা। আর আসবেন না প্লিজ। পরদিন বিকেল বেলা ঢাকায় ফিরব।রিসেপসনে হাসি হাসি মুখ করে বসে আছে রুপা। বললাম,
- চলে যাচ্ছি। এখনো বুঝি আপনাদের হাসি হাসি মুখ করে থাকার নিয়ম?
- ধন্যবাদ স্যার, আবার আসবেন।
এমদাদ ভাইয়ের স্পেসিও গাড়িটা খুব দ্রুত চলছে। আমি তাকিয়ে আছি দিগন্তে....
কবে রুপালি আলো এসে পড়েছিল
গহীন অরণ্যের বুকে!
তারপর যেন মেঘ এসে আঁধার দিয়ে গেল
মস্ত পৃথিবী জুড়ে
অমাবস্যা এক রাতে............
- সরি স্যার
-কাগজের ফুল দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু ঘ্রাণ নেই। রিসেপসনে এই যে আপনারা যেসব সুন্দরী মেয়ে বসে থাকেন তারাও ঠিক একই রকম। এই যে ধরেন সারা রাত হাজবেন্ডের সাথে ঝগড়া করেছেন ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে অথচ পরদিন খুব সেজেগুজে হাসি হাসি মুখ করে বলতেই হবে জ্বী স্যার! জ্বী স্যার!
মেয়েটি এবার শুকনো মুখে খুব কষ্ট করে একটুখানি হাসল।
পেছনে এমদাদ ভাই আমাকে চিমটি কেটে চুপিচুপি বলছেন, এই বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! আমার মতো বাউন্ডুলের হঠাৎ চট্টগ্রামে কাজ পড়ার কোন কারণ নেই। এমদাদ ভাই একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনিই নিয়ে এসেছেন আমাকে তাকে দুই দিন সঙ্গ দেয়ার জন্য। এ রকম অভিজাত হোটেলে প্রবেশ করতেই এমন কাগুজে ফুল দেখে মনটা হু হু করে উঠল। কিন্তু এমদাদ ভাই বেশিদূর এগুতে দিলেন না।
০২.
আমার তখনো ঘুম ভাঙ্গেনি। এমদাদ ভাই রেডি হয়ে বের হবেন। উনার সাড়ে নয়টায় মিটিং আছে। হঠাৎ এমন সময় দরজায় কেউ নক করল তারপর ফুলের একটা তোড়া নিয়ে এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে বললেন অরণ্য চৌধুরী এটা আপনার জন্য রিসেপসনের সেই মেয়েটি পাঠিয়েছে। কেমন করে দু কথায়ই এমন সুন্দরী ললনাদের কাবু করে দিতে পারো তুমি? আমাকে একটু শিখিয়ে দিতে পারো ভাই? কত দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতে হয় আমার!
মুখে একটুখানি হাসি আনা ছাড়া এ সময় বলার মতো তেমন কিছু থাকে না।
সেদিন সন্ধ্যায় এমদাদ ভাইয়ের মিটিং তখনো শেষ হয়নি।এদিকে আমি আর রুপা হাটছি পাশাপাশি দিদার মার্কেটের সামনে দিয়ে। ও নিজেই কথা বলা শুরু করল
-আপনার সাথে কতদিন পর দেখা তাই না?
- গতকালই তো তোমার সাথে দেখা হল রিসেপসনে। আমি বেশ কৌতুক করলাম।
-এখনো তো তাই করছেন! সিরিয়াস হন একটু প্লিজ। কি করছেন এখন? হঠাৎ এখানে কেন?
- আমি বাউন্ডুলে আর আমার মতো যারা তাদের কাজ ব্যস্ত মানুষদের সঙ্গ দেয়া। এখানেও সেটাই করছি। তোমার কথা বলো?
- আমার কথা শোনার দরকার নেই। বলার মতোও তেমন কিছু নেই। মাস্টার্স শেষ হতে না হতেই বাবা মারা গেলেন। ছোট বোন আর অসুস্থ মা। ওদেরকেই টানছি এখন খুব কষ্ট করে।
- এর চেয়ে ভাল কিছু করতে পারো। বরাবরই তো তোমার রেজাল্ট ভাল ছিল?
- সে সুযোগটা পেলাম কোথায়?
-হুম। ডিপার্টমেন্টে আমাদের কিন্তু তেমন কথা হত না। অথচ এখন তোমার সাথে বেশ সহজভাবেই কথা বলছি।মেয়েদের প্রতি যে জড়তা ছিল সেটা এখন আর আমার খুব একটা নেই বললেও চলে তাই নয় কি?
-জানি না আগে আপনি কেমন ছিলেন তবে সিনিয়র ভাইদের সাথে আমার কথা বলা নিষেধ ছিল।
- এখন নেই কেন?
- নেই তাই নেই। আপনি সব জেনেও কিন্তু ন্যাকামো করছেন।
-তোমরা বিয়ে কেন করলে না তা কিন্তু জানি না!
- জানার দরকার নেই। আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলব?
সত্যি করে জবাব দিবেন?
- হু, বল
-ইউনিভাসিটিতে আমি যখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন রোজ বুধবার আমার ব্যাগে সুযোগ বুঝে কে গোলাপ দিয়ে যেত?
- এই জন্যই বুঝি আজ সকালে সব গোলাপ পরিশোধ করে দিলে?
-না। সবকিছু পরিশোধ করা যায় না। আমার শুধু এটুকুই জানার ছিল।
- দেবার নেই কিছু?
-নেবার শক্তি কি আপনার আছে?
হঠাৎ সামনের পথটুকু ঝাপসা মনে হলো। জীবন সত্যিই বিচিত্র। রুপা বলল, সামনে আমার বাসা। আর আসবেন না প্লিজ। পরদিন বিকেল বেলা ঢাকায় ফিরব।রিসেপসনে হাসি হাসি মুখ করে বসে আছে রুপা। বললাম,
- চলে যাচ্ছি। এখনো বুঝি আপনাদের হাসি হাসি মুখ করে থাকার নিয়ম?
- ধন্যবাদ স্যার, আবার আসবেন।
এমদাদ ভাইয়ের স্পেসিও গাড়িটা খুব দ্রুত চলছে। আমি তাকিয়ে আছি দিগন্তে....
কবে রুপালি আলো এসে পড়েছিল
গহীন অরণ্যের বুকে!
তারপর যেন মেঘ এসে আঁধার দিয়ে গেল
মস্ত পৃথিবী জুড়ে
অমাবস্যা এক রাতে............